• মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন |
  • English Version

চিকিৎসা সহায়তার প্রতীক্ষায় আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

 

সাইমুম সাব্বির শোভন,জামালপুর: জামালপুর জেলার একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা। সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে হানাদার মুক্ত করেছে এই দেশকে।
জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা দিঘলাকোনা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবেন্দ্র সাংমা। স্ত্রী মিলন দাংগো ও ডিগ্রি ২য় বর্ষ পড়–য়া ছেলে জয় দাংগো কে নিয়ে ছোট সংসার তার।
৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯ বছরের কিশোর এবেন্দ্র সাংমা। সারা দেশে যখন যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে তখন বাবা জাংবান মারাকের কাছে অনুমতি নিয়ে চলে যান প¦ার্শবর্তী দেশ ভারতে। সেখানে প্রশিক্ষন শেষে অংশগ্রহন করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে।
প্রথমে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা এবং পরে জামালপুর জেলার ঐতিহাসিক কামালপুরে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তিনি। টানা ৯ মাস য্দ্ধু শেষে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেন বাঙ্গালীকে এবং হানাদারমুক্ত করেন এই দেশকে।
যে মুক্তিযোদ্ধা শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করেছে এই দেশকে এখন সেই মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা লিভার ক্যান্সারের আক্রমনে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
এবেন্দ্র সাংমার ছেলে জয় দাংগো এই প্রতিবেদককে বলেন-“ চলতি বছরের জুন জুলাইয়ের দিক থেকে বাবা পেটে ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। আমরা এখানে কিছুটা চিকিৎসা করায়। এই চিকিৎসায় কাজ না হলে অক্টোবরের ৫ তারিখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে কিছুটা চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা বাবাকে ঢাকায় রেফার্ড করে। পরে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাবার লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তাররা বাবাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে। ”
তিনি আরো বলেন -“আমাদের গরীবের সংসার। মাত্র ২৫ শতাংশ কৃষি জমি আছে। এটা চাষাবাদ করেই চলি। বাবা যে ভাতা পায় সেটা দিয়েও চলে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা টাকা কোথায় পাবো। একবার ইউএনও মেডাম আইসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই খবর নেই ইউএনও মেডাম। সেটা দিয়ে কিছুদিন ঔষধ কিনে খাওয়াইছি। এখন আর কোনো টাকাই নাই। ঔষধ তো দূরের কথা ভাত খাওয়ার টাকা আমাদের কাছে নেই।”
জয় দাংগো বলেন – “বিজয়ের মাসে সারা দেশ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরন করে। আমার বাবাও এই দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করছে। আমার বাবাকে কেউ স্মরন করে না। কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা আমার বাবার চিকিৎসার জন্য সহায়তা করতো তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।”
এবেন্দ্র সাংমার স্ত্রী মিলন দাংগো বলেন-“জয়ের বাবার অবস্থা খুব খারাপ। হাটা চলা করতে পারে না। কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। খুবই কম খায়। এখন আঙ্গর কাছে টাকাউ নাই যে একটু চিকিৎসা করমু। কেউ যদি একটু সাহায্য করতো তাহলে অনেক উপকার হইতো।”
বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা বলেন- “জামালপুর জেলার একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা। তার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজ কল্যান অধিদফতরের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার ছেলে জয় দাংগোর সাথে সবসময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। তার খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ ও ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমার চিকিৎসা চলাকালীন উপজেলা প্রশাসন তাকে সার্বিক সহায়তা করেছে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তার পাশে আছে বলে জানান তিনি।”


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।